দুদকের মামলায় বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও সাবেক পৌর সচিব রেজাউল করিমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আদালতে তারা উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল ইসলাম এ আদেশ দেন।
বুধবার দুপুরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহা. রবিউল ইসলাম এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী।
তিনি জানান, “দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার মামলায় মেয়রের জামিন নামঞ্জর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
“একই মামলায় আদালত বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকেও কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি বর্তমানে মাগুরা পৌরসভার সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন”
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেয়রকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর পরই পৌনে ১টার দিকে সমর্থকরা বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম।
এ সময় সড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। প্রায় ৪০ মিনিট পর সড়কে যান চালাচল স্বাভাবিক হয়।”
শুনানি শেষে মেয়রের পক্ষের আইনজীবী ও বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়র হাবিবুর রহমান তিন সপ্তাহ আগে উচ্চ আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেয়।
“উচ্চ আদালতের আদেশে তিনি বুধবার সকালে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মেয়র ও সাবেক সচিবকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন“, যোগ করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) তরুণ কান্তি ঘোষ মামলার নথির বরাত দিয়ে বলেন, “২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান কোনো নিয়মনীতি প্রতিপালন না করে অবৈধভাবে ১৭ জনকে পৌরসভার বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে এক কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পৌরসভার উন্নয়নের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডে দুই কোটি টাকা জমা করে। এই টাকা থেকে আবাহনী ক্লাব ও ডায়াবেটিস হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়। পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও তৎকালীন সচিব মোহম্মদ রেজাউল করিম ভবন নির্মাণ না করে পরস্পর যোগসাজসে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
দুদক সহকারী পরিচালক বলেন, “২০২০ সালে পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার সত্যতা পেয়েছে দুদক। মেয়র ও সচিবসহ অন্যদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজসে সরকারের অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়।“
মামলার অপর আসামিরা হলেন- এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন দিপু দাস (পাম্প অপারেটর), আসাদুজ্জামান (বাজার শাখার কর আদায়কারী), জ্যোতি দেবনাথ (সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক), মারুফ বিল্লাহ (সহকারী কর আদায়কারী), শহিদুল ইসলাম (সহকারী কর আদায়কারী), শরমিন আক্তার বনানী (বিল ক্লার্ক), হাসান মাঝি (ট্রাকচালক), হাসনা আক্তার (সুইপার সুপারভাইজার), মো. জিলানী (সুইপার সুপারভাইজার), তানিয়া (এমএলএসএস), অর্পূব কুমার রায় (পাম্প চালক), মেহেদী হাসান (সহকারী পাম্প চালক), সৌদি করিম (সহকারী কর আদায়কারী), পারভিন আক্তার (সহকারী কর আদায়কারী), সাব্বির মাহমুদ (কর আদায়কারী) ও সেতু পাল (সহকারী হেলপার)। এরা সবাই পৌর সভার সাবেক কর্মী ছিলেন।মামলার এই আসামিরা সবাই বরখাস্ত হয়েছেন।
Post a Comment